একজন চা ওয়ালার একটি অনেক বড় চিন্তা যা আমাদের কাছে খুবই ক্ষুদ্র। আসুন আমার এই দিক গুলো বিবেচনা করে জীবন যাপন করি। (জুনায়েদ ইভানের ফেসবুক থেকে)

মাসখানেক আগে আমরা কয়েকজন পান্থপথ বাস টার্মিনালে রাস্তার একটি চায়ের দোকান থেকে চা নিয়ে কয়েক হাত পাশেই দাড়িয়ে চা খাচ্ছি। চা বিক্রেতা কিছু সময় যেতেই এসে বলল চায়ের কাপ দিয়ে যাবেন।

চা বিক্রেতা, একজন চা বিক্রেতার গল্প

মুখের সামনে হঠাৎ একটা মশা উড়ে এলে আমরা যেভাবে হাত দিয়ে তাড়িয়ে আবার কাজ করতে শুরু করি অনেকটা সেরকম ভঙ্গিতে আমরা তাকে ''আচ্ছা' জাতীয় কিছু একটা বলে তাড়িয়ে দেই।
দু মিনিট যেতে না যেতেই ছেলেটি আবার এসে বলল, ভাই কাপ গুলো দিয়ে যাবেন।
ছেলেটির এরকম উদ্ভুত্তপূর্ণ আচরণে ক্ষেপে গিয়ে আমাদের একজন সব গুলো কাপ জমা দিয়ে তাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে বিজয়ের ভঙ্গিতে ফিরে এল।
আমরা সব সময় ঠিক এই জায়গাটাতে এসেই যে ভুলটা করি সেটা হল - রিয়েক্ট করে ফেলি। আমি কীরকম আচরণ করব সেটা আমি না, ঠিক করে দিচ্ছে অন্য কেউ !! অর্থাৎ আমার ক্রিয়া নির্ভর করছে অন্য কারো প্রতিক্রিয়ায়।
আমি তাকে পুরো বিষয়টা চা বিক্রেতার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে চিন্তা করতে বললাম। জায়গাটা একটা বাস টার্মিনাল অর্থাৎ এখানে যারা তার কাস্টমার অধিকাংশই কোন না কোন দূরপাল্লা বাসের জন্য অপেক্ষা করে।
বাস আসতে লেইট করলে চা অর্ডার করে কোন একটা কাউন্টারের সামনে গিয়ে তারা চা খায়। হঠাৎ যখন তাদের বাস চলে আসে তখন অনেকেই চায়ের কাপ কাউটারের আশে পাশে কোথাও রেখেই বাসে উঠে পড়ে; পরবর্তীতে সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
নিশ্চয়ই এরকম অনেকগুলো অভিজ্ঞতার কারণেই এই চা বিক্রেতা বাড়তি সাবধানতা হিসেবে এরকমটা করছে।
দূরবীনের যে ল্যান্সে সব কিছু বড় করে দেখা যায়; ল্যান্সটা উল্টো করে তাক করলেই কিন্তু সব কিছু ছোট করে দেখা যাবে। তোমার আশে পাশের কেউ এরকম আচরণ করলে সেটা নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে চিন্তা না করে তার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে চিন্তা করবে। দেখবে সেই ল্যান্সটা তুমি খুঁজে পাবে যেখানে তার অসৌজন্যমূলক আচরণ গুলো তোমার কাছে ছোট হয়ে ধরা দেবে।
অন্য একটা ঘটনা বলি...
একবার রাতের বাসে করে চিটাগাং থেকে ঢাকা যাচ্ছি। বাসটা এমনিতেই ছাড়তে অনেক লেইট করেছিল। তারপরেও মাত্র কিছুদূর যেতে না যেতেই দেখলাম ড্রাইভারের ফোনে একটা ফোন আসার পর তিনি রাস্তার এক পাশে বাস থামিয়ে সেখান থেকে নেমে গিয়ে কথা বলতে বলতে একটা সিগারেট জ্বালালেন।
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে অপেক্ষা করার পরেও যখন তার আসার নাম নেই তখন দুয়েকজন যাত্রী বাস থেকে নেমে গিয়ে দেখেন , তিনি একা একা দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। বাসের যাত্রীরা সবাই চিৎকার চ্যাঁচামেচি করছিলেন।
নবাব সিরাজউদদৌলা, সিগারেট খেতে নেমেছেন। খান*র পোলা মনে হয় রাস্তার মাঝখান থেকে প্যাসেঞ্জার উঠানোর জন্য দাড়িয়েছে, দেখেছেন না একটা ফোন এসেছিল সেটা নির্ঘাত প্যাসেঞ্জারের ফোন।
কেউ আবার আরেকটু গভীরে গিয়ে বলছিলেন, নিশ্চয়ই ডাকাত দলের সাথে এর সম্পর্ক আছে, পুলিশে ফোন লাগাও।
বাসের যাত্রীরা যখন প্রায় উত্তেজিত হয়ে বাস থেকে নেমে তাকে আক্রমণ করতে যাবে এমন সময় মানুষটা নিজ থেকে এসেই ড্রাইভিং সীটে বসে বললেন, কিছুক্ষণ আগে আমার মেয়েটা মারা গেছে।
যাত্রীরা নিশ্চুপ হয়ে দেখলেন, এই মৃত্যু শোক নিয়েই তিনি বাকি আড়াইশো কিলোমিটার পথ চালিয়ে গেলেন।
হুট করেই রিয়েক্ট করে বসবেন না। দূরবীনের লেন্সটা একটু উল্টো দিকে তাক করলেই দেখবেন যে জিনিসগুলো আপাতত দৃষ্টিতে বড় মনে হচ্ছে সেসব ছোট হয়ে ধরা দেবে।
Previous
Next Post »

EmoticonEmoticon

:)
:(
=(
^_^
:D
=D
=)D
|o|
@@,
;)
:-bd
:-d
:p
:ng

জুনায়েদ ইভান এর ফেসবুক স্ট্যাটাস তথা কঠিন উক্তি। জুনায়েদ ইভান এর উক্তিসমূহ

একটা শক্ত পাথর ভেঙ্গে ফেলার সূত্রটা কিন্তু খুবই সহজ। যতটুকু আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা পাথরের আছে তার চাইতে বেশি আঘাত তাকে করতে হবে। যে কা...

Popular Posts